এসপির বাধার কারণে গোদাগাড়ীতে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের শতমন ধান

এসপির বাধার কারণে গোদাগাড়ীতে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের শতমন ধান

এসপির বাধার কারণে গোদাগাড়ীতে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের শতমন ধান
এসপির বাধার কারণে গোদাগাড়ীতে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের শতমন ধান

স্টাফ রিপোর্টার: গোদাগাড়ীতে পুলিশের এসপির হুমকির কারণে শত শত মন ধান নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে গত ২৩ মে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন পত্র দেয়া হয়। সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যার্থে ২৪ মে জেলা প্রশাসক রাজশাহী, পুলিশ সুপার রাজশাহী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোদাগাড়ী, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী মডেল থানা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোদাগাড়ী ও গোদগাড়ী ৩নং পাকড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর অনুলিপি প্রদান করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার ললিতাহার এলাকার পিতা মৃত: ইনসার আলীর পুত্র এরশাদ আলী ১০বছরের জন্য গোদাগাড়ী পাকড়ি ইউনিয়নের হাপানিয়া মৌজায় ৫৬ বিঘা জমি বোয়ালিয়া থানাধীন হেতেম খাঁ এলাকার ডা: শাহ্ বশিরুল হক এর পুত্র আ: রহিম শাহ এর নিকট হতে লিজ নেন। যার মধ্যে ২২ বিঘা জমিতে ধান রয়েছে।

অভিযোগে এরশাদ আলী অভিযোগ করে বলেন, আমি উক্ত লিজ গ্রহীতার নিকট হতে গোদাগাড়ী উপজেলার হাপানিয়া মোজায় ৫৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেয়ারা, বরই ও ধান চাষ করি। বর্তমানে ২২ বিঘা জমির ধান কর্তনের পর ধান মাড়াই করতে গেলে জমি লিজ দাতা সরকারি কর্মকর্তা (এসপি) হওয়ার ক্ষমতা অপব্যবহার করে আমাকে ধান মাড়াই করতে বাধা প্রদান করে এবং অযৌক্তিক বিভিন্ন সময়ে টাকা দাবি করতে থাকে ও পুলিশি হুমকি প্রদান করে। যার করানে আমারা শতশত মন ধান রোদ বৃষ্টিতে নষ্ট হতে যাচ্ছে, ধান মাড়াইয়ের সাথে জড়িত ২২জন শ্রমিক মানবেতর জীবন-যাপন করছে। জমির শত শত মন ধান পচে নষ্ট হলে এটি শুধু গরীব চাষী হিসেবে আমার ও শ্রমিকদের ক্ষতির পাশাপাশি দেশের খাদ্য শর্ষ্যরে চরম অপচয় হবে।

অভিযোগকারী আবেদন করেন বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক।

এরশাদ আলী সাংবাদিকের কাছে বলেন, আমি এসপি আ: রহিম শাহ্র কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য জমি লিজ নি। ২বছরের অগ্রিম হিসেবে সাত লক্ষ ৩০হাজার টাকা অগ্রিম নেন। এসপি সাহেব ঈদের দুইদিন আগে থেকেই তিনি আসার নাম করে তালবাহানা করে যাচ্ছেন । পরে আবার বলেন আমাকে অধেক ধান দিতে হবে নইলে ধান মাড়াই করতে পারবেনা। আর তোমরা আমার জমি ছেড়ে দাও।

এরশাদ আলী বলেন, আমি এ ব্যাপারে আদালতেও মামলা করবো।

সরেজমিনে গোদাগাড়ী মৌজার হাপানিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় জমিতে ধান কেটে পালা দেয়া আছে। এর পাশে ঘুরে বেড়াছে গরু। মাঝে মাঝে গরুতে ধান খেয়ে ফেলতে দেখা যায়। এছাড়াও রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থাকে ধান নষ্ট হচ্ছে। উক্ত এলাকার আর কারো জমিতে ধান পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। সবাই ধান মাড়াই করে গোলায় (ধান রাখার পাত্র) তুলে রেখেছেন। যারা লিজ নিয়ে জমি করেছেন তারা লিজদাতাকে ধান বুঝিয়ে দিয়েছেন। শুধু মাত্র এরশাদ আলী তার ধান মাড়াই করতে পারেননি। সরেজমিনে এলাকায় গেলে স্থানীয় এলাকাবাসী এসপি আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, শশুর বাড়ির সূত্রে আ: রহিম শাহ ২২বিঘা জমি পান। পরে তিনি আশেপাশের জমিগুলো বছরে বিঘা প্রতি ৭হাজার চুক্তিতে লিজ নিয়ে বাগান ও ধান চাষ শুরু করেন। এসময় তিনি জমিতে একটি টিনসেড ঘর, পানি দেয়ার জন্য মটোর বরিন্দ্র করেন। এছাড়াও তিনি জমি চাষে মাসিক ও দৈনিক চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োজিত করেন। কিন্তু এসব শ্রমিকদেরও টাকা তিনি ঠিকমত দেননি। এখনো অনেক শ্রমিক তার কাছে টাকা পাবেন। এরপর তিনি বছরে বিঘা প্রতি ১০হাজার টাকা চুক্তিতে এরশাদ আলীকে জমি লিজ দেন।

হাপানিয়া পাইনার বাথান এলাকার আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের এখানে বাপের সম্পত্তি তেমন নাই। আমরা অন্যের জমি লিজ নিয়ে করি। যাদের জমি লিজ নিয়ে ধান করি তাদের বিঘা প্রতি ধান দিতে হয়। অগ্রায়ন মাসে ধান চাষ করতে খরচ কম হওয়ায় জমির মালিককে বিঘা প্রতি কাঁচিতে ৮মন (২৮ কেজিতে মন ধরা হয়) ধান দেয়া লাগে। কিন্তু বর্তমান মাসে ধান করলে খরচ বেশি হওয়ায় জমির মালিককে কাঁচিতে ৫মন (২৮ কেজিতে মন ধরা হয়), পাঁকাতে সাড়ে ৩মন ধান দেয়া লাগে। এর বাইরে মালিক আর কোন ধান দাবি করতে পারবেনা। আর জমির মালিকরা দাবিও করেনা। কিন্তু এর বাইরে যদি কেউ দাবি করে তাহলে সে মানুষের কাতারেই পরেনা।

তিনি আরো বলেন, এরশাদ আলীর জমির ধান প্রায় ২০দিন আগে কাটা হয়েছে। তারপরে আমাদের জমির ধান কেটে আমরা মাড়াই করে জমির মালিককে তার প্রাপ্য ধান বুঝিয়ে দিয়েছি। অথচ আমাদের আগে ধান কেটেও এরশাদ আলীর ধান জমিতে পড়ে আছে, নষ্ট হচ্ছে প্রচুর টাকার ধান। এটা অমানবিক। এরকম চললে লোকটা মাঠে মারা যাবে। আর সঙ্গে যেসব দিনমজুর শ্রমিক যুক্ত আছে তারাও নি:স্ব হয়ে যাবে।

উক্ত এলাকার শ্রী সম্ভু রবিদাস, আফতাব উদ্দিন মিয়া, আওয়াল, তোফাজ্জল ইসলাম একই কথা বলেন। তারা বলেন এসপি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। তিনি নিয়মের বাইরে যেতে পারেন না। নিয়ম অনুসারে তার ধান নেয়া উচিৎ।

এদিকে একই এলাকার মোমিন বলেন, এসপি আ: রহিম শাহ তার জমিতে কাজের জন্য মাসিক ৯হাজার টাকা বেতনে কজে নিয়োজিত করেন। এখনো তিনি ২মাসের ১৮ হাজার টাকা পাবেন। প্রায় ৮মাস পার হয়ে গেলেও এখনো তিনি টাকা পাননি।

এছাড়াও আব্দুস সালাম ১৬ হাজারসহ পোতাহার ড্রিপের ড্রাইভার রায়হান, ট্রাক্টরের ড্রাইভার গাফ্ফার, লিটন, আমগাছ বিক্রি বাবদ সীতারামসহ অনেকে টাকা পবেন। যা একবছর ধরে দেননি এসপি আ: রহিম শাহ।

অভিযোগের ব্যাপারে এসপি আ: রহিম শাহ বলেন, জমিটি আমার না। আমার শশুরের জমি আমার স্ত্রী ভাগে পেয়েছে। আমার জমি হলেতো আমি লিজ দিবো। তারা যা বলছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি আরো বলেন, তাদের কাছেই ডিপের লোক চাষাবাদ বাবদ ৯০হাজার টাকা পাবে। তখন প্রশ্ন আসে আপনি লিজদেননি তাহলে চাষাবাদের লেনদেনের বিষয়ে আপনি জানলেন কিভাবে? এক পর্যায়ে তিনি দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেন আমার বিরুদ্ধে শত শত নিউজ করেন আমার কিছু হবেনা।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply